আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক বাগেরহাটের ৪টি আসন থেকে একটি আসন কমানোয় বিপাকে পড়েছেন বাগেরহাট-৪, মোরেলগঞ্জ-শরণখোলা আসনে থাকা বিভিন্ন দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। ইতোমধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠে ব্যাপক দৌড়ঝাঁপ করলেও সবকিছু থমকে গেছে নির্বাচন কমিশনের ঘোষণায়। গত ৪ সেপ্টেম্বর রাত ৮টায় নির্বাচন কমিশন বাগেরহাটের ৪টি আসন থেকে ৩নং আসন রামপাল-মোংলাকে অপর আসনের সাথে যুক্ত করে ৩টি আসনের গেজেট প্রকাশ করেছে। অপরদিকে আসন ফিরিয়ে না দিলে বাগেরহাটের কোন আসনে নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না বলেও ঘোষণা দিয়েছেন সর্বদলীয় ঐক্যজোটের নেতারা।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে হাসিনা সরকারের পতনের পর পলায়নে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি দৃশ্যমান হয় মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলায়। সম্ভাব্য প্রার্থীরা ভোটমুখী গণসংযোগ, পথসভা শুরু করেন। এমন সময় আসন কমানোর ঘটনা বিনা মেঘে বজ্রপাত সম আঘাত বলে মনে করছেন সকলে। ইতোমধ্যে আসন কমানোর প্রতিবাদে ব্যাপক আন্দোলন করেছেন বাগেরহাটের সর্বসাধারণ। কিন্তু নির্বাচন কমিশন তাতে কর্ণপাত করেনি।
বাগেরহাট-৪ আসনে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ তাদের প্রার্থী বেশ আগেই চূড়ান্ত করেছেন। জামায়াতের প্রার্থী করা হয়েছে অধ্যক্ষ আব্দুল আলীমকে। ইসলামী আন্দোলন-এর প্রার্থী করা হয়েছে মাওলানা মোঃ ওমর ফারুক নূরীকে। ১৯৯১ সালে এ আসনে জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে ও ২০০১ সালে চার দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে মুফতি মাওলানা আব্দুস সত্তার এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। সে বিবেচনায় জামায়াতে ইসলামী এ আসনটি তাদের বলে মনে করে।
উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মোঃ শাহাদাৎ হোসাইন আগামী নির্বাচনকে ঘিরে তাদের প্রস্তুতি সম্পর্কে দৈনিক খুলনা গেজেটে বলেন, “আমরা পিআর পদ্ধতি চাচ্ছি। না পেলেও সমস্যা নেই।” মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলা আসনে ইতোমধ্যে দু’বার জামায়াদের প্রার্থী জয়লাভ করেছে। অতীতের চেয়ে বর্তমান প্রেক্ষাপট আরও ভিন্ন। জামায়াতের কর্মী, সমর্থক ও ভোট অতীতের চেয়ে কমেনি বরং বেড়েছে। আমাদের কোন কর্মী বসে নেই। কারো কোনো দুর্নামও নেই। তাই, আমরা (জামায়াতে ইসলামী) যে কোনো সময় ভোটের জন্য প্রস্তুত আছি।
ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী কোনদিনই এখানে আসন পায়নি। দলটির উপজেলা সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মোঃ আসাদুল্লাহ বলেন, “অতীতের চেয়ে বর্তমানে তাদের অবস্থান অনেক মজবুত। অতীতে লেভেল প্লেইং ফিল্ড ছিল না। পাতানো ও প্রহসনমূলক নির্বাচন হয়েছে। আসন্ন নির্বাচনে ইসলামী দল হিসেবে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীকেই সবাই সমর্থন করবেন।”
অপরদিকে বিএনপি থেকে বেশ কয়েকজনের নাম শোনা গেলেও বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্য নির্বাহী কমিটির শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. ওবায়দুল ইসলাম ও বাগেরহাট জেলা বিএনপি’র সদস্য কাজী খায়রুজ্জামান শিপনের নাম আলোচনার শীর্ষে রয়েছে। এ ছাড়াও বিএনপি থেকে নমিনেশন প্রত্যাশী রয়েছেন জাতীয়তাবাদী তাতীদল কেন্দ্রীয় কমিটির ড. কাজী মনিরুজ্জামান, বাগেরহাট জেলা বিএনপি’র সদস্য মনিরুল হক ফরাজী, এ্যাডঃ ফারহানা জাহান নিপা ও কাজী খায়রুজ্জামান শিপনের সহধর্মিণী শাহারুন জামান নিপা।
উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি শহিদুল হক বাবুল দৈনিক খুলনা গেজেটকে বলেন, “নির্বাচনের প্রস্তুতিও আমরা নিয়েছি। যেকোনো সময় নির্বাচন হলে দলের মনোনীত প্রার্থীকে জয়লাভ করানোর মত ভোটার, কর্মী ও সমর্থক বিএনপির রয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “নির্বাচন কমিশন বাগেরহাটের একটি আসন কেটে আমাদেরকে বিভ্রান্তির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। আমরা আসন ফিরে পেতে আন্দোলন করছি।”
খুলনা গেজেট/এনএম